ব্লগ থেকে আয় করার ৫টি সহজ উপায় ।

বাংলা ব্লগ পরিবারে আসার জন্য আপনাদের সকলের প্রতি রইল আন্তরিক ভালোবাসা । আজ আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব , তা হলো ব্লগ হতে কিভাবে অনলাইনে আয় করা যায় । বর্তমানে অনলাইনে আয়ের যতগুলো মাধ্যম র‍য়েছে তার মধ্যে অন্যতম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ব্লগ থেকে টাকা আয় করা । কেননা একদশক আগেও যেখানে নিজের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ছিল বেশ কঠিন । কারণ বড় পত্রিকায় ছাপার সুযোগ পান খুবই কমসংখ্যক লেখক । তবে ঘরে ঘরে ইন্টারনেট আসার কারণেই নিজের মতামত, লেখা, ছবি সবকিছুই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সহজ উপায় হয়ে ওঠেছে ব্লগ। আর হ্যাঁ আপনি চাইলেই সেই ব্লগকেই করে তুলতে পারেন আপনার আয়ের অন্যতম উৎস। কিছু কিছু লোক রয়েছেন যারা বলে থাকেন, বাংলাদেশ বা ভারত থেকে এখনও ব্লগ থেকে যথেষ্ট টাকা আয়ের সুযোগ নেই। কিন্তু আমি বলব এই দেশেই এমন ব্লগাররা রয়েছেন যারা তাঁদের ব্লগ থেকেই আয় করছেন মাসে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু জানতে হবে এ থেকে আয় করার সঠিক উপায় । তাই আজ আমরা জানার চেষ্টা করব কিভাবে সঠিক উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায় ।

ব্লগ থেকে আয় করার জন্য পাঁচটি জনপ্রিয় উপায় রয়েছে , সে বিষয়ে আজ আমরা আলোচনা করব । যে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করব তা হল নিম্নরূপঃ

  • ব্লগে বিঙ্গাপন প্রকাশ করে আয় ।
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় ।
  • নিজের পণ্য বিক্রি করে আয় ।
  • ব্লগের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং করে আয় ।
  • সরাসরি ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে আয় ।

বিস্তারিতঃ 

ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে আয়

ব্লগ থেকে আয় করার সবথেকে সহজ ও প্রচলিত উপায় হল ব্লগে বিঙ্গাপ্ন প্রকাশ করে আয় । আপনি যদি আপনার ব্লগ থেকে আয়ের কথা ভাবেন তাহলে এই উপায়টিই বেছে নিতে পারেন ।বর্তমানে পুরো পৃথিবীতেই ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে তা থেকে আয় করা একটি জনপ্রিয় মাধ্যম । আর এখন বাংলা ভাষায় ও তা সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার মাধ্যমে কমিশন হিসেবে তখনি আয় করতে পারবেন যদি পাঠক সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেন ।  আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন ব্যবহার করার জন্য প্রথমেই বেছে নিন একটি বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। ব্লগার এবং বিজ্ঞাপনদাতা উভয়ের মধ্যেই সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কটি হল গুগলের AdSense। তাছাড়া রয়েছে BidVertiser, Infolinks এর মতো অন্য নেটওয়ার্কও ।আপনি আপনার পছন্দের নেটওয়ার্কে বিজ্ঞাপন প্রকাশক হওয়ার জন্য আবেদন করুন। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে আপনার ব্যাঙ্ক আকাউন্ট , যেখানে কমিশনের টাকা পাঠানো হবে তার বিবরণও দিতে হবে আবেদনপত্রে ।  আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের তরফ থেকে তা জানিয়ে আপনাকে একটি ইমেল করা হবে।  এরপর আপনাকে পাঠানো হবে একটি বিজ্ঞাপন কোড যা আপনি আপনার ব্লগে প্রকাশ করবেন। আপনি আপনার পছন্দ মতো জায়গায় এটি প্রকাশ করতে পারেন, যেমন আপনি এটিকে লেখার মাঝে বা লেখার পাশের বারে রাখতে পারেন।  আপনি বিজ্ঞাপন কোডটি ঠিক স্থানে রাখার দু’ঘন্টার মধ্যেই বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে তা আপনার ব্লগে প্রকাশ করা হবে এবং বিজ্ঞাপনটি আপনার ব্লগে দেখাব । এবার আপনার পাঠকরা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই টাকা জমা হতে থাকবে আপনার অ্যাকাউন্টে। প্রতি ক্লিকে আপনি ০.০১ থেকে ৫০ ইউএস ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন । আপনার ব্লগের বিষয় এবং কি পরিমাণ লোক বিজ্ঞাপনে ক্লিক করছে তার উপর নির্ভর করবে আপনার আয়ের পরিমাণ ।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি সাইট বেছে নিয়ে ঐ সাইটের প্রোডাক্টগুলোর লিংক আপনার আর্টিকেলে যুক্ত করতে হবে । যখন পাঠক সেই লিঙ্কে ক্লিক করবেন বা কিনবেন আপনি কমিশন হিসেবে আয় করতে পারবেন । আপনার ব্লগে এটি ব্যবহার করার জন্য প্রথমেই বেছে নিন কোন পণ্য বা পরিষেবার মার্কেটিং করতে চান। কয়েকটি প্রচলিত অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক হল Clickbank, OMG India, Trootrac media । এছাড়াও ফ্লিপকার্ট বা আমাজনের মতো কোম্পানিতে মার্কেটিং অ্যাফিলিয়েট হিসেবে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে । আপনি আপনার পছন্দের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন পত্র পূরণ করুন । এরপর মার্কেটিং-এর জন্য কী কী কৌশল ও পদ্ধতি ঠিক করেছেন, তা জানাতে হতে পারে আবেদনের সময় । বেশিরভাগ ওয়েবসাইটই ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় আপনার আবেদনটি গৃহীত হল কি না। আবেদন গৃহীত হলে আপনার অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্টটিতে লগ-ইন করে বেছে নিতে পারেন আপনার ব্লগের জন্য উপযুক্ত লিঙ্কটি । এরপর যখনই কেউ ঐ লিঙ্কে ক্লিক করবে অথবা পণ্য বা পরিষেবাটি কিনবে তা থেকে আপনি কমিশন পাবন । কমিশন হিসেবে বিক্রয়মূল্যের ২.৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ অবধি পেতে পারেন । কমিশনের মূল্য নির্ভর করে সাধারণত পণ্য বা ওয়েবসাইটের ওপর। যেমন আপনি যদি ফ্লিপকার্টের বিজ্ঞাপন দেন, তাহলে কোনও ক্রেতা মোবাইল ফোন কিনলে আপনি যে কমিশন পাবেন, তার থেকে অনেক বেশি কমিশন পাবেন কেউ জামাকাপড় কিনলে। একটি কথা আপনি মনে রাখতে পারেন - যে জিনিসের বিক্রি বেশি তার কমিশন কম, তাই পণ্য বা পরিষেবা নির্বাচনের সময় এমন জিনিস বাছুন যা তুলনামূলকভাবে কম বিক্রি হয় কিন্তু আপনার পাঠক তা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করবে ।

নিজের পণ্য বিক্রি করে আয়

ব্লগে অন্যসব মাধ্যমগুলোর চেয়ে সবথেকে স্থায়ী ও নিশ্চিত আয়ের পদ্ধতি হল ব্লগের সাহায্যে নিজের পণ্য বিক্রি করা। এক্ষেত্রে আয়ের ওপর সবথেকে বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। যেহেতু পণ্য ডিজাইন, দাম নির্ধারণ, মার্কেটিং পুরোটাই ব্লগার নিজে করেন তাই আয়ও তাঁর ওপরই নির্ভর করে। আপনি নিজ হাতে বা কাউকে দিয়ে কোনও একটি পণ্য বা পরিষেবা তৈরি করুন। পণ্য বা পরিষেবার মূল্য নির্ধারণ করুন। পণ্যটি কিভাবে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবেন তা নির্ধারণ করুন।  বিক্রয়মূল্য সংগ্রহের পদ্ধতি হিসেবে পেপাল , নগদ , চেক , ব্যাঙ্কে সরাসরি টাকা পাঠানো , অর্থাৎ আপনার এবং ক্রেতার দুজনের জন্যই সবথেকে বেশি সুবিধাজনক পদ্ধতিটি বেছে নিন ।  ব্লগে একটি ল্যান্ডিং পাতা যোগ করুন , সেখানে আপনার তৈরি পণ্যের বিবরণ দিন , পণ্যটির ব্যবহার , উপযোগিতা সম্পর্কে লিখুন , যোগ করুন কেনার বোতাম।  নিজের পাঠকের বাইরে অন্যদের মধ্যেও আপনার পণ্যের প্রচার করুন । ব্যবহার করুন সোশ্যাল মিডিয়া , ইমেল মার্কেটিং বা অ্যাডওয়ার্ডের মত মাধ্যমগুলি । আর এভাবেই আপনি আপনার ব্লগ ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার নিজের পণ্য বিক্রি করে আয় করতে পারেন ।

ব্লগের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং করে আয় 

আমরা যারা ব্লগিং করে থাকি আমাদের নিশ্চয়ই এ ছাড়াও অন্য ধরনের দক্ষতা থাকতে পারে এবং সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ব্লগের মাধ্যমে এর প্রচার করে আমরা ফ্রিলান্সিং এর কাজ করতে পারি । যেমন ধরুন আপনি ভালো ইডিটিং করতে পারেন , আঁকতে পারেন , ব্লগে আপনার এই দক্ষতার প্রচার করুন ও ফ্রিল্যান্স কাজ জোগার করে নিন। ধরুন এরকম কোনও দক্ষতাই আপনার নেই, তাহলেও শুধুমাত্র ব্লগিং সংক্রান্ত টিপস্ দিয়েই আয় করতে পারেন আপনি। দেখবেন অনেকেই টাকা দিয়ে আপনার পরামর্শ নিচ্ছে, যা এতদিন আপনি বিনামূল্যেই দিয়ে এসেছেন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি কী কী কাজ করতে পারেন তা সংক্ষেপে লিখুন , লিখুন কেন একজন আপনাকে কাজ দেবে , অন্যদের থেকে আপনি কোথায় এগিয়ে, উল্লেখ করুন যোগাযোগের নম্বর ও টাকা । অর্থাৎ আপনার পাঠকদের জানান কী কী কাজ আপনি করতে চান , তাঁদের আগ্রহ তৈরি করুন । তাঁরা যেহেতু ইতিমধ্যেই আপনার ব্লগ পড়েন ও আপনার দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাই তাঁরা সহজেই আগ্রহী হবেন ।  ব্লগ ছাড়া অন্যান্য মাধ্যম যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন ইত্যাদিতেও আপনার দক্ষতার কথা জানান । যত বেশি সংখ্যক লোক আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারবে কাজের সুযোগও ততই বাড়বে। এছাড়াও আপনার দক্ষতার চাহিদার ওপরও নির্ভর করছে আয়ের পরিমাণ । আপনি যদি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন এবং জটিল প্রজেক্টে কাজ করার উপযোগী হন তাহলেই বেশি আয় করতে পারেন ।

সরাসরি ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে আয়

ব্লগ থেকে টাকা আয় করার আরেকটি উপায় হল কোনও কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের বিজ্ঞাপন ব্লগে দেওয়া । এতে করে অ্যাডনেটওয়ার্ককে বাদ দিয়েই বিজ্ঞাপন দিতে পারছেন আপনি । এছাড়াও আপনিই ঠিক করছেন কোন বিজ্ঞাপন দেবেন ও তার জন্য কতটাকা নির্ধারণ করবেন , ফলে নিয়ন্ত্রণ থাকছে আপনার হাতে । তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই ভাল কাজ করলেও অনেকক্ষেত্রে একেবারেই কার্যকরী হয়না। এজন্য আপনি মাসিক বা সাপ্তাহিক মূল্যও ধার্য্য করতে পারেন , যেখানে পাঠকের ক্লিক করার ওপর আয় নির্ভর করবে না । আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য কী করতে হবে সেই বিবরণ দিয়ে একটি পাতা তৈরি করুন। সেখানে লিখুন আপনার পাঠক কারা, আপনি কী বিষয় লেখেন , এবং আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপনের মূল্য কত। ব্লগের বিভিন্ন জায়গার জন্য বিভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন , যেমন হেডারে হয়তো আপনি বেশি মূল্য ঠিক করলেন আর লেখার মধ্যে কম। আপনার যোগযোগ নম্বর বা ই-মেইল আইডিও উল্লেখ করুন। মানিটাইজেশন নেটওয়ার্ক এ নিজের ব্লগকে নথিভুক্ত করান । এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি অনেক বিজ্ঞাপনদাতার কাছে পৌঁছতে পারবেন । যেমন BuySell Ads এরকম একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক। ব্লগের যে জায়গায় আপনি বিজ্ঞাপন দিতে চান শেখানে বক্স করে লিখুন “এখানে বিজ্ঞাপন দিন”। এটি বিজ্ঞাপনদাতার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে । ব্লগের যে যে জায়গায় বিজ্ঞাপন দেবেন প্রতি জায়গাতেই “এখানে বিজ্ঞাপন দিন” লিখবেন না । কোনও কোনও জায়গায় কিছু নকল বিজ্ঞাপন দিন, এতে বিজ্ঞাপনদাতার আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহী হবেন । সুতরাং আমি মনে করি এই বিষয়টি আপনার জন্য আয় করতে আরো সুবিদা হবে , কেননা আপনি নিজে বিজ্ঞাপন দাতার সাথে কথা বলে আপনার আয়ের পরিমাণ ঠিক করতে পারবেন ।

পরিশেষে বন্ধুগণ আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে সঠিক কিছু পথ দেখানোর জন্য । যাতে করে অন্য কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে আপনারা নিজেরাই কিছু একটা করতে পারেন । আর আজকের এই আর্টিকেল থেকে যদি আপনার সামান্য উপকারও হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না । তাছাড়াও যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে , তাহলে নিশ্চয়ই শুধরানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকবেন । আপনাদের সঠিক পরামর্শ সাধরে গ্রহণ করা হবে । কারণ আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য এবং পরিপূর্ণ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা । আমি আশা করব নিশ্চয়ই আমাদের এই উদ্দ্যেশ্যে সামিল হয়ে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবেন ।

ধন্যবাদ সবাইকে ।


No comments

Powered by Blogger.