বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম , রাজনীতি , সংস্কৃতি , শিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে কখনো একমতে পৌঁছতে পারে নাই বা ভবিষ্যতে পারবে বলেও আমার মনে হয় না । কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এই একটি বিষয়ে কেবল দ্বিমত পোষণ করে না , আর সেটি হল " বাংলার ক্রিকেট " । পরিস্তিতি যেমনই হোক না কেন বাংলার মানুষ ক্রিকেটের সঙ্গে ছিল , আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে । ক্রিকেট নিয়ে কোন প্রকার অবহেলা বা প্রতারণা বাংলার মানুষ কখনো বরদাস্ত করবে না বলে আমার বিশ্বাস । গুণীজনদের কাছে একটি কথা প্রায়ই বলতে শোনা যায় -" যে ত্রিশ লক্ষ্য লোকের প্রাণের বিনিময়ে যেমন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে ঠিক , তেমনি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলতে বা মাথা উঁচু করে দাড়াতে শিখিয়েছে বাংলার ক্রিকেটের এই দামাল ছেলেরা "। তাই আমরা কখনোই চাইব না বাংলার এই ঐতিহ্য ধরে রাখার মূল শক্তি কখনো আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাক । নিশ্চয়ই আমাদের উচিত যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আমাদের প্রাণের ক্রিকেটকে বাংলার জনগণের কাছে বাঁচিয়ে রাখা । কেননা বাংলার ক্রিকেটই হচ্ছে বাংলার আঠারো কোটি জনগণের হাসি , কান্না এবং প্রতিবাদের মূল মন্ত্র ।

আজ আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব , তা হল -
- বাংলার ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তন
- বাংলার টাইগারদের এ পর্যন্ত অর্জন
- টিম গঠনপ্রণালি কেমন হওয়া উচিত
বিস্তারিত :
বাংলার ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তন
বাংলাদেশ আন্তর্জার্তিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম আত্নপ্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রপিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে । স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে " বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড " নামে নিজস্ব ক্রিকেট খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয় । এরপর অনেক অপেক্ষার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পূর্নাঙ্গ সদস্যের মর্যাদা লাভ করে ২০০০ সালের ২৬ জুন । তখন "বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড" নাম পরিবর্তিত হয়ে "বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড" নামকরণ করা হয় । এরপর একই বছরের নভেম্বর মাসের ১০-১৩ তারিখে উদ্বোধনী ম্যাচে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৯উইকেটে পরাজিত হয় । এছাড়া বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় ১৯৯৭ সালে ।
বাংলার টাইগারদের এ পর্যন্ত অর্জন
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রপি জয় বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন । কারণ এই জয়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় । তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বকাপের মত মঞ্চে ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নক আউট পর্বে খেলেছিল । আর সর্বশেষ কোনো বড় অর্জন ছিল ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রপিতে প্রথম সেমিফাইনাল খেলা । বাংলাদেশের এছাড়াও আরো কিছু সাফল্য রয়েছে , কিন্তু তার মধ্যে এগুলো হল সবচেয়ে অন্যতম ।
টিম গঠনপ্রণালি কেমন হওয়া উচিত
টিম গঠনপ্রনালি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় । কেননা মনে করুন সাকিব , তামিম বা মুশফিক যদি এক ম্যাচ খেলতে না পারে তাহলে তার পরিবর্তে কাকে সে জায়গায় বসানো যায় এ নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথার কমতি থাকে না । এই বিষয় নিয়ে এখনি উচিত আমাদের মাথা ঘামানোর , তা না হলে সময় চলে গেলে বাংলাদেশের আর কিছুই করার থাকবে না , শুধু আপচুষ করা ছাড়া । এ জন্য আমি আমার মতো করে একটি পরামর্শ শেয়ার করছি , মানা না মানা সেটা আপনাদের উপর । কারণ ক্রিকেট নিয়ে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আমার চেয়ে বেশি চিন্তা করে থাকে ।
আমার পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটারদের প্রথম তিন ক্যাটাগরিতে সাজানো উচিত । নিম্নরূপ ঃ
১ম শ্রেণী ২য় শ্রেনী ৩য় শ্রেনী
- তামিম ইকবাল - নাজমুল ইসলাম শান্ত -
- লিটন দাশ - ইমরুল কায়েস -
- সাকিব আল হাসান - -
- মুশফিকুর রহমান - -
- মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ - -
- সৌম্য সরকার - -
- মেহেদী হাসান মিরাজ - মোসাদ্দেক হোসেন -
- নাইম হাসান - -
- সাইফুদ্দিন - -
- আবু জায়েদ রাহি - তাসকিন আহমেদ -
- মুস্তাফিজুর রহমান - রুবেল হোসেন -
১ম শ্রেনী একটু বিশ্লেষন করলে দেখা যায় - তিনজন পেস বোলার ( মুস্তাফিজ , রাহি , সাইফুদ্দিন ) , তিনজন স্পিনার ( সাকিব , মেহেদী , নাইম ) , দুইজন পার্ট টাইম বোলার ( মাহমুদউল্লাহ এবং সৌম্য ) এবং দীর্ঘ ব্যাটিং লাইনআপ ।
আর এই প্রথম শ্রেণীর মতো আরও দুইটি শ্রেণী তৈরি করা , যদি সম্ভব হয় । তা না হলে প্রথম শ্রেণীর মতো দ্বিতীয় আরেকটি শ্রেণী অন্তত তৈরি করা । যাতে করে প্রথম শ্রেণীর কেউ ইঞ্জুরি হলে বা ছুটি নিলে আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্রিকেটারদের দিয়ে খেলাতে পাড়ি । যেমন কোনো ওপেনার ( তামিম বা লিটন ) ইঞ্জুরি হলে আমরা ওপেনার হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তকে খেলাতে পারি । ঠিক একই ভাবে সাকিব ইঞ্জুরি হলে আমরা সাকিবের সমকক্ষ্য অর্থাৎ সাকিবের স্থান তিন নম্বরে খেলতে যে সুবিধা পায় , তাকে দিয়ে খেলাতে হবে । ওপেনার বা অন্য কোনো জায়গায় খেলে অব্যস্ত হুট করে নিয়ে এসে থাকে এই জায়গায় বসানো যাবে না ।
তাছাড়া সবসময় ২য় শ্রেণীর যে ক্রিকেটাররা থাকবে তাদেরকে সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে এবং যেকোনো ছোটখাটো টিম ( জিম্বাবুয়ে , আফগানিস্তান ইত্যাদি ) এর ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারদের বসিয়ে রেখে দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্রিকেটারদের দিয়ে খেলাতে হবে । অর্থাৎ অন্তত দুইটি শ্রেণী যেন আমাদের একদম চাঙ্গা ভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে । যেমনটা আমরা ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে দেখে থাকি । ইন্ডিয়া টিমকে যখন আমরা বিপদে পড়তে দেখি , তখনি নতুন কোনো তরুণ তুর্কি এসে তাদের জায়গাকে আবার পরিপক্ষ করে তুলে ।
তাহলেই না আমরা প্রকৃত টাইগার টিমকে খুঁজে পাব । আর বাংলার মানুষেরা বুক উঁচু করে বলতে পারবে -
" বাংলার টাইগাররা মাঠে হুংকার দিয়ে জয় চিনিয়ে আনার শিক্ষা নিয়েছে ,
কেঁদে হারকে সঙ্গী করে কখনো বিড়াল হয়ে মাঠ ছাড়ার শিক্ষা নেয় নাই ।"
( বি.দ্র: আবেগের বশে হয়তো অনেক কিছুই বলে ফেলেছি , কিন্তু এই বিষয়গুলো আমার চেয়ে সবচেয়ে ভালো বুঝে বাংলার ক্রিকেট টিম ম্যানেজমেন্ট । তবে আমাদের শুধু একটাই চাওয়া বাংলার ক্রিকেটের উন্নতি হোক । )
সবশেষে যা হারিয়ে যাবে তা ফিরিয়ে পাওয়া অসম্ভব বা কষ্টসাধ্য হবে । যেমনটা বলা যেতে পারে বাংলার ফুটবলের কথা । একসময় মোহামেডান এবং আবাহনীর খেলা হলে বাংলার মানুষ পাগলের মত তা উপভোগ করত । যদি আমরা তার দ্বারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারতাম , তাহলে আজ নিশ্চয়ই বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে বাংলাদেশ নামক একটি দল বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করত । কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা বাংলার মাটি থেকে ফুটবল হারিয়ে ফেলেছি । তাই আমি বলব আমাদের কাছে এখন যে সম্পদ ( বাংলার ক্রিকেট ) রয়েছে সেটাকে যন্ত নেয়া উচিত এবং এর উন্নতি কিভাবে করা যায় , সেই বিষয়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করা উচিত । তা না হলে .............................? থাক আমি আর কিছু বললাম না , যা বলার সময়ই আমাদেরকে বলে দিবে ।
ধন্যবাদ সবাইকে ।
No comments