ডোমেইন হোস্টিং কি এবং কিভাবে কিনব

ইন্টারনেটে সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল ডোমেইন হোস্টিং । মনে করুন আপনি আমাদের ওয়েবসাইট " বাংলা ব্লগ " ভিজিট করতে চান , এর জন্য আপনাকে ডোমেইন এর সাহায্য নিয়েই আমাদের সাইট ভিজিট করতে হবে । সুতরাং বলা যায় যে , আমার ওয়েবসাইট এর নাম , পরিচয় এবং ঠিকানা সবকিছুই হল ডোমেইন নাম । একটি ডোমেইন নাম ছাড়া কোনো ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় । আর ইন্টারনেটে বিডিও , ইমেজ , মিডিয়া এবং আর্টিকেল লিখে ওয়েবসাইট এ আপলোড করে জমা করে রাখার জন্য সার্ভারের স্পেস টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয় । আর এই স্পেস হচ্ছে মূলত হোস্টিং । চলুন তাহলে আজ আমরা ডোমেইন হোস্টিং কি এবং এগুলো কিভাবে কিনতে হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব ।   

ডোমেইন হোস্টিং এর যে বিষয়গুলো আজ আমরা আলোচনা করব-

  • ডোমেইন কি 
  • ডোমেইনের প্রকারভেদ 
  • ডোমেইন কোথা থেকে কিনব   
  • ডোমেইন কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলো নজর রাখা উচিত 
  • হোস্টিং কি
  • হোস্টিং এর প্রকারভেদ এবং ভালো হোস্টিং কোনটি 

বিস্তারিত :

ডোমেইন কি

ডোমেইন বা DNS ( Domain Naming System ) হল এমন এক প্রকার নামকরণ , যার দ্বারা ইন্টারনেটের এই বিশাল দুনিয়াতে যেকোনো ওয়েবসাইটকে খুঁজে পাওয়া যায় বা সনাক্ত করা যায় । ইন্টারনেটে থাকা সব ধরণের ওয়েবসাইট একটি IP Address ( Internet Protocol Address ) এর সাথে যুক্ত থাকে । আর আইপি এড্রেস এমন একটি সাংখ্যিক ঠিকানা , যেটি ব্রাউজারকে নির্দেশ করে ওয়েবসাইটি ইন্টারনেটের কোন জায়গায় বা সার্ভারে হোস্ট করা আছে । যার ফলে IP Address আমাদের ব্রাউজারগুলোকে ( Chrome , Firefox , Opera , Internet Explorer ) ওয়েবসাইটের সেই ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে থাকে । আর আমরা আমাদের ওয়েব ব্রাউজারে সার্চ করা ডোমেইন নামের সাথে সংযুক্ত ওয়েবসাইটটিকে দেখতে পাই এবং ব্যবহার করতে পারি । 

ডোমেইনের প্রকারভেদ 

ডোমেইন এর অনেক প্রকার নাম রয়েছে । কিন্তু আমি আপনাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডোমেইন নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব , যাতে করে আপনারা ডোমেইন কেনার সময় সঠিক ডোমেইন বাছাই করে কিনতে পারেন । 

  1. TLD - Top Level Domains .
  2. CcTLD - Country code Top Level Domain . 

TLD - Top Level Domains

TLD - Top Level Domain নামগুলি ইন্টারনেটে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয় । এই ডোমেইন নাম গুলো Internet domain extention এর মধ্যে সব থেকে বেশি value থাকা domain extension । একটি ডোমেইন নামের ( . ) ডট এর পরের অংশটি নির্দেশ করে , ডোমেইনটি টপ লেভেল ডোমেইন নাকি সাধারণ ডোমেইন । 

কিছু Top Level Domain extension এর উদাহরণ নিম্নরূপঃ

  • .com ( Commercial )
  • .org ( Orgenization )
  • .net ( Network )
  • .gov ( Government )
  • .edu (Education )
  • .biz ( Business )
  • .info ( Information )
এই ধরণের domain extension টাকার বিনিময়ে ডোমেইন কেনার ওয়েবসাইট থেকে কিনে ব্যবহার করতে হয় ।

CcTLD - Country code Top Level Domain

CcTLD - Country code Top Level Domain বলতে কোন দেশকে টার্গেট করে বানানো হয়েছে এমন ধরণের ওয়েবসাইট বা ব্লগকে বুঝানো হয়ে থাকে । এই ধরণের ডোমেইন এক্সটেনশন নির্ধারিত দেশের টু লেটার ISO Code এর উপর নির্ভর করে বানানো হয় । 

Country code Top Level Domain এর কিছু উদাহরণ হল নিম্নরূপ 

  • .Us ( United States )
  • .In ( India )
  • .Bd ( Bangladesh )
  • .Cn ( China ) 
  • .Ro ( Romania ) ইত্যাদি ।  

এরকম আরো অনেক দেশের ডোমেইন নাম রয়েছে , যেগুলি কেবল একটি দেশকে টার্গেট করে বানানো হয়েছে ।

ডোমেইন কোথা থেকে কিনব 

ডোমেইন নাম কেনার জন্য আপনাকে ইন্টারনেটে থাকা Domain Name Service Provider গুলির কাছে যেতে হবে । তারপর সেখানে একটি একাউন্ট বানিয়ে আপনি ডোমেইন নেইম কিনতে পারবেন । সাধারণত একটি টপ লেভেল ডোমেইন দাম প্রায় Rs.500 থেকে Rs.1500 এর মধ্যে পেয়ে যাবেন । ডোমেইন নেইমগুলি সাধারণত বছর মেয়াদী হয়ে থাকে , অর্থাৎ আপনি চাইলে একবছর , দুইবছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য ডোমেইন নাম কিনতে পারবেন । 

নিচে ইন্টারনেটের কিছু সেরা Domain Name Service Provider দেওয়া হল :

  • www.bigrock.in/domain-registration 
  • https://www.namecheap.com
  • https://www.crazydomains.in
  • https://godaddy.com/domains
  • https://www.hostgator.in/
আপনি চাইলে এই লিংকগুলোতে গিয়ে একাউন্ট খুলে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন নাম কিনে নিতে পারেন ।

ডোমেইন কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলো নজর রাখা উচিত

ডোমেইন কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন -

  • যতদূর সম্ভব একটি ছোট ডোমেইন নেইম কেনার চেষ্টা করবেন ।যাতে করে লোকেদের আপনার ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে সুবিধা হয় ।
  • বেছে নেওয়া ডোমেইন নেইম যাতে সহজে বলা যায় এবং লিখা যায় ।
  • আপনার বাছাইকৃত ডোমেইন নাম যেন ইউনিক হয় ।
  • স্পেশাল কারেক্টার ( যেমন : হাইফেন বা নাম্বার ) ছাড়া ডোমেইন নাম বাছাই করার চেষ্টা করবেন । 
  • অবশ্যই টপ লেভেল ডোমেইন কিনার চেষ্টা করবেন ।
  • ওয়েবসাইটের বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডোমেইন কেনার চেষ্টা করবেন ।  
কম্পিউটার এন্ট্রিভাইরাস কি , জানতে এখানে ক্লিক করুন । 

হোস্টিং কি

ওয়েভহোস্টিং এমন একটি সার্ভিস যার দ্বারা ইন্টারনেট দুনিয়াতে পার্সোনাল বা যেকোনো প্রকার ওয়েবসাইট বা ব্লগ খুলতে পারি । যখন আমরা যেকোনো হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে হোস্টিং কিনি , তখন আমাদের ইন্টারনেটের ওয়েব সার্ভারে কিছু স্পেস বা জায়গা দেয়া হয় । তখন আমরা আমাদের কিনে নেয়া জায়গাতে ভিডিও , ফাইল , ইমেজ ্‌, মিডিয়া বা আর্টিকেল ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপলোড করি , তখন সেগুলো ওয়েব সার্ভারে জমা হতে থাকে । 

হোস্টিং এর প্রকারভেদ এবং ভালো হোস্টিং কোনটি  

ওয়েবসাইট এর প্রয়োজনীয়তা , সিকিউরিটি এবং স্পিড এর উপর নির্ভর করে হোস্টিং অনেক প্রকার হয়ে থাকে । কিন্তু ওয়েবসাইট এবং ব্লগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে এমন কিছু হোস্টিং হল নিম্নরূপ :

  • Shared Hosting 
  • V P S ( Virtual Private Server )
  • Dedicated server 
  • Cloud hosting 

Shared Hosting 

শেয়ার্ড হোস্টিং এর মানে হল ওয়েব হোস্টিং শেয়ার করা । অর্থাৎ একটি ওয়েব সার্ভার কে বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইট এর সাথে ভাগ করে ব্যবহার করা । এর বেশকিছু সুবিধা রয়েছে , যেমন -

  • নতুন ওয়েবসাইটের জন্য সেরা হোস্টিং 
  • এক সার্ভার অনেকজন মিলে ভাগ করে ব্যবহার করার কারণে অনেক সস্তায় এবং কম দামে পাওয়া যায় ।
  • অনেক শেয়ার্ড হোস্টিং কোম্পানি রয়েছে যারা ফ্রিতে হোস্টিং দিয়ে থাকে । তাছাড়া Rs.৫০ থেকে Rs.২০০ এর মধ্যে অনেক ভালো শেয়ার্ড হোস্টিং কিনতে পাবেন । 

V P S ( Virtual Private Server )

ভিপিএস হোস্টিং বলতে একটি ওয়েব সার্ভারের একাদিক ভাগের মধ্যে একটি ভাগ ক্রয় করে সেটি ব্যবহার করাকে বুঝায় । নতুন অবস্থায় ভিপিএস হোস্টিং নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই , আপনার সাইটে যখন প্রচুর পরিমাণ ভিজিটর থাকবে তখন ভিপিএস হোস্টিং ব্যবহার করা ভালো । ভিপিএস হোস্টিং এর কিছু সুবিধা - 

  • ভিপিএস সার্ভার অনেক বেশি নিরাপদ ।
  • দ্রুত এবং কার্যক্ষমতা অনেক উচ্চস্তরের।
  • অনেক গুণ বেশি ট্রাফিক হ্যান্ডেল করতে পারে ।   
  • ভিপিএস হোস্টিং Rs.১০০০ বা Rs.১৫০০ মধ্যে পাওয়া যায় । 

Dedicated server 

ডেডিকেটেড হোস্টিং হল একটি পুরো ওয়েব সার্ভার । এটি শেয়ার্ড হোস্টিং এর মতো শেয়ার করে বা ভিপিএস হোস্টিং এর মত একটি ভাগ নিয়ে ব্যবহার করতে হয় না । এখানে পুরো সার্ভারই আপনাকে দিয়ে দেয়া হয় । ডেডিকেটেড সার্ভারের দাম অনেক বেশি , সর্বনিম্ন Rs.৬০০০ এবং এর বেশি হয়ে থাকে । এর কিছু সুবিধা হল -

  • অনেক বেশি ট্রাফিক এবং ভিজিটর হ্যান্ডেল করতে পারে ।
  • এই রকমের হোস্টিং অনেক অনেক বেশি নিরাপদ ।
  • কার্যক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেকগুণ বেশি ।
  • ওয়েবসাইট বা ব্লগ অনেক দ্রুত কাজ করে ।  

Cloud hosting 

বর্তমানে ব্লগার এবং ওয়েবসাইট মালিকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হল ক্লাউড হোস্টিং । ক্লাউড হোস্টিং এ অনেকগুলো সার্ভার থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সিপিউ , র‍্যাম এবং স্টোরেজ বাড়ানো বা কমানো যায় । ক্লাউড হোস্টিং এর কিছু সুবিধা - 

  • সার্ভার ডাউন হওয়ার সুযোগ অনেক কম থাকে ।
  • কার্যক্ষমতা অনেক বেশি উন্নত এবং প্রয়োজন অনুসারে বাড়ানো বা কমানো যায় । 
  • অনেক বেশি ট্রাফিক হ্যান্ডেল করতে পারে ।
  • ক্লাউড হোস্টিং এর কার্যক্ষমতার তুলনায় এর দাম অনেক কম ।মাসিক Rs.৪০০ থেকে Rs.১০০০ এর বিনিময়ে ব্যবহার করা সম্ভব । 

আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য ভালো হোস্টিং কোনটি ? আপনি যদি উপরের বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েন , তাহলেই আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটটির জন্য কোন হোস্টিং টি কিনলে ভালো হবে ।

আরো পড়ুন : বাংলায় আর্টিকেল লিখার নিয়ম ।  

যারা ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে চায় , তাদের জন্য এই বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । আপনি যদি ডোমেইন বা হোস্টিং কিনতে চান ,তাহলে এই বিষয়ে ভালো করে জেনে নিয়ে ডোমেইন হোস্টিং ক্রয় করুন । তা না হলে টাকা ব্যয় করে ডোমেইন হোস্টিং কিনে আপনি কোনো লাভ করতে পারবেন না । ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি । এই বিষয় নিয়ে যদি কোনো মন্তব্য বা পরামর্শ থাকে , তাহলে নিশ্চয়ই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না ।  

ধন্যবাদ সবাইকে ।

No comments

Powered by Blogger.